Home বিবিধ ইংরেজির গাল-গপ্প
বিবিধ

ইংরেজির গাল-গপ্প

Share
Share

বিদেশি ভাষা হিসেবে ইংরেজি শিক্ষণ কঠিন মনে হওয়া দোষের কিছু নয়। ভাষা যেমন-তেমন সাহিত্য আরও বিদঘুটে! যেমন লেখকের নাম, তেমনি বাহারি তাঁদের সাহিত্যকর্ম। মনে রাখা তো দূরের কথা, তাঁদের পদ-পদবি, কর্ম-ধর্মের উচ্চারণই ঠিকমত করা যায় না। এটাও আমাদের দোষ না! প্রশ্ন জাগতে পারে তাহলে দোষ কার বা কাদের? উত্তর সবারই জানা, দোষ সিস্টেমের! প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক — কোন পর্যায়েই ইংরেজি সাহিত্য বিষয়টি আমাদের তেমন একটা পড়া হয় নি। যার কারণেই যত বিভ্রাট-বিপত্তি। পৃথিবীর অনেক দেশেই ছোট ক্লাস থেকে বড় ক্লাস পর্যন্ত ইংরেজি সাহিত্যের পাশাপাশি বিশ্ব সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ পড়ানো হয়। আমরাই এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছি। পৃথিবীর একমাত্র দেশ আমাদের দেশ যেখানো ইংরেজি পড়ানো হয় বাংলা মিডিয়ামে! বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ভাষা শেখার সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হলো ‘Communicative Language Learning System’ এবং ‘Learner Centred Approach’. এ পদ্ধতি দুটিতে শিক্ষকের মাতৃভাষা ব্যবহারের অনুমতি খানিকটা থাকলেও শিক্ষার্থীর তা একেবারেই নেই। ভুল হোক শুদ্ধ হোক ইংরেজিই ব্যবহার করতে হবে। Trial and Error পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভাষা শিক্ষণের পথে এগিয়ে যাবে। The teacher shall remain more a facilitator than a teacher. ভাবুন আমাদের দেশে কী হয়, বকাউল্লা (বাংলায়) বকে যায়, শোনাউল্লা শুনে যায়; এক কান দিয়ে ঢুকে অন্য কান দিয়ে বের হয়ে যায়। ভাষা শিক্ষণের ক্ষেত্রে উন্নত সব পদ্ধতির আবিষ্কার হলেও আমাদের দেশে তার আবির্ভাব ও প্রয়োগ কোনটাই নাই বললেই চলে। আমি পড়ে আছি সেই আদিম যুগের GTM (Grammar Translation Method) নিয়ে। তাইতো আজও আমরা সেই ব্যক্তিকেই ইংরেজির জাহাজ মনে করি যে ব্যক্তি এসব প্রশ্ন যথাঃ “এই নদীতে কাপড় বাঁচে না” বা “যে পাড়াতে মোরগ ডাকে না, সে পাড়াতে কী ভোর হয় না” গোছের বাক্যের ইংরেজি অনুবাদ জানে। অথচ দু’কলম মুক্ত হস্ত লিখতে চারটি কলম ভাঙ্গে,  ‍দু’বুলি আওড়াতে বললে, অষ্ট বুলি অ্যাঁ, ওঁয়ার ঝড় তোলে!

এবার মূল কথায় ফিরে আসি। যেকোন ভাষা শেখার দুটি পর্যায় আছেঃ (ক) প্রাথমিক শিক্ষণ বা চলনসই শিক্ষণ (অনেকটা দায় সারা গোছের)। (খ) উচ্চতর শিক্ষণ বা পাকাপোক্ত শিক্ষণ। ইংরেজিতে immersion নামে একটি শব্দ আছে যার বাংলা করলে দাঁড়ায় অবগাহন, সোজাকথায় ডুব দেওয়া; ভাষা শিক্ষণের জগতে ডুব দেওয়া। হ্যাঁ, জ্ঞান সাগরে ডুব দিতে হলে ভাষার সাগরে আগে ডুব দিতে হয়। ইংরেজিতে assimilation নামে একটি শব্দ আছে যার বাংলা করলে দাঁড়ায় আত্ত্বীকরণ বা আত্মার সাথে গেঁথে নেওয়া। হ্যাঁ ভাষা শেখার মানে হলো ভাষাটাকে আত্মার সাথে গেঁথে নেওয়া। আর আত্মার সাথে গেঁথে নেওয়া একটু জটিলই বটে!

এবার সাহিত্য, বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিদেশি তথা ইংরেজি সাহিত্য পাঠের  প্রয়োজনীয়তা কী থাকতে পারে, সে বিষয়ে নজর দেয়া যাক। ইংরেজি সাহিত্য পড়বেন না তো গ্রীক-রুশ সাহিত্য পড়বেন নাকি! প্রাইমারী থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়েও একটিমাত্র বিদেশি ভাষার (ইংরেজি) চলনসই পাঠই শেষ হলো না, গ্রীক-রুশ নিয়ে মাথা ঘামাবেন কখন! আগেই বলেছি ভাষা শেখার দুটি পর্যায় আছে। এখন চলছে দ্বিতীয় পর্যায়। অবশ্য আমাদের বেশিরভাগের প্রথম পর্যায়ই ঠিকমত শেষ হয় নি।

যাহোক, একটি প্রশ্ন খুবই প্রাসঙ্গিক — ভাষা নাকি সাহিত্য — কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্নটা অনেকটা মুরগী আগে নাকি ডিম আগে টাইপের। সাহিত্য পড়তে হলে ভাষা জানতে হবে। দায়সারা গোছের ভাষা জানলে সাহিত্যের রস আস্বাদন সম্ভব নয়। আবার সাহিত্য পাঠ ব্যতিত ভাষা শিক্ষণের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করা যাবে না। ভাষাকে আত্মার সাথে গেঁথে নিতে হলে ভাষার জনগোষ্ঠীর শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে সম্যক ধারনা নিতে হয়। কেননা বলা হয়ে থাকে, “Language is culture specific.” যে ব্যক্তি ধান গাছ দেখে নি তাকে যদি বলা “ধান গাছ থেকে তক্তা তৈরি হয়” সে তা অবিশ্বাস করতে পারবে না।  “ধান গাছ থেকে তক্তা তৈরি হয়” বাক্যটি আঙ্গিকগত দিক থেকেও অশুদ্ধ নয়। কর্তা, কর্ম, ক্রিয়া — সবই ঠিকঠাক। শুধু যোগ্যতা না থাকায় বাক্যটিকে অশুদ্ধ বলতে হচ্ছে। আর এ যোগ্যতা বিচার ব্যাকরণ পাঠ করে জানা সম্ভব নয়। এর জন্য জানা দরকার ভাষার সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতি জানা না থাকার কারণেই শহুরে শিশু বলে ওঠে, “মাছ পাওয়া যায় ফ্রিজ থেকে”! একই কারণে কবির কলমের ঝরণা বেয়ে নামে, “কি সুন্দর জ্যোৎস্না রাত্রি, আকাশে উড়ছে এক পাল হাতি!” ব্যর্থ প্রেমিক গেয়ে ওঠে, “সিমেন্টের রাস্তায় গরুতে ঘাস খায়, ও প্রিয়া তুমি কোথায়?” আপিসের কেরাণি লেখেন, “সাহেব চলিয়া গেল, তাহার জুতা-যুগল রহিয়া গেলেন।”

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

অফিসকক্ষে ভৌতিক সন্ধ্যা

বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে অফিসের সবাই যখন পাঁচ তারকা হোটেলে আমোদ-ফুর্তিতে মাতোয়ারা, আমি...

একজন রব মিয়ার গল্প ও অন্যান্য

এক চারিদিকে বানের পানি থৈ থৈ করছে। এবার আগাম বন্যা হয়েছে। গ্রামের...

পঠন-পাঠন ও জ্ঞানচর্চা

“There is no frigate like a book.”-Emily Dickinson, অর্থাৎ, “বইয়ের মত এমন...

Our Ill-paid Farmers and Future of Our Foodstuff

A few days back while coming back from Jessore, I came across...