Home বিবিধ প্রাইজবন্ড কী?
বিবিধ

প্রাইজবন্ড কী?

Share
Share

প্রাইজবন্ড কী – সে বিষয়ে জানার আগে জানা দরকার বন্ড আসলে কী। বন্ড হল সরকার কর্তৃক একটি ঋণপত্র বা প্রতিশ্রুতি পত্র। এ ঋণপত্র বাজারে ছেড়ে সরকার বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। বিনিময়ে বন্ডের চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরকার বিনিয়োগকারীদেরকে সুদ প্রদান করে থাকে। সেদিক থেকে অপরাপর বন্ডের সাথে প্রাইজবন্ডের একটি মৌলিক তফাৎ রয়েছে। কেননা প্রাইজবন্ড সুদমুক্ত। প্রাইজবন্ড বিক্রি করে সরকার সরাসরি জনগণের কাছ থেকে ঋণ নেয় এবং তা কিনে সরকার সে ঋণ পরিশোধ করে থাকে।   


প্রাইজবন্ডের বন্ড শব্দটির সাথে প্রাইজ শব্দটি জুড়ে দেয়ার কারণ হলো – সত্যিকার অর্থেই এতে পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিবছর ৩১ জানুয়ারি, ৩০ এপ্রিল, ৩১ জুলাই, ৩১ অক্টোবর (সরকারী ছুটির দিন না হলে) – চারবার প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এটা অনেকটা লটারির মত। তবে লটারির সাথে প্রাইজবন্ডের মৌলিক পার্থক্য হলো লটারি জিতলে টাকা পাওয়া যায়, না জিতলে যে টাকা দিয়ে লটারি ক্রয় করা হয়েছে তা ফেরত পাওয়া যায় না; কিন্তু প্রাইজবন্ডের পুরস্কার না জিতলেও যে টাকা দিয়ে প্রাইজবন্ড ক্রয় করা হয়েছে তা দাবি সাপেক্ষে যেকোন সময় ফেরত পাওয়া যায়। উপরন্তু সরকার বাতিল না করলে এবং ইতোপূর্বে পুরস্কার না জিতলে ক্রয়কৃত একই প্রাইজবন্ড দিয়ে বারবার পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা থাকে।


পৃথিবীতে প্রথম প্রাইজবন্ড চালু হয় আয়ারল্যান্ডে ১৯৫৬ সালে। একই বছর যুক্তরাজ্যে এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রিমিয়াম বন্ড নামে ছাড়া হয়। বাংলাদেশে প্রাইজবন্ড চালু হয় ১৯৭৪ সালে। জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর (বর্তমানে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর) সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে এ ব্যবস্থা চালু করে। তখন প্রাইজবন্ডের মূল্যমান ছিল ১০ টাকা ও ৫০ টাকা। ১৯৯৫ সালে ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড চালু করা হয়। ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড চালু হওয়ার পর পূর্বের ১০ ও ৫০ টাকা মূল্যমানেরগুলো ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়। বর্তমানে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাইজবন্ডের ব্যবস্থাপনা করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সমস্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক (সরকারী, আধা-সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংক), ক্যাশ অফিস ও ডাকঘর থেকে প্রাইজবন্ড কেনা ও ভাঙানো যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্য কোথাও প্রাইজবন্ডের লেনদেন বেআইনী। সাধানরত একজন ব্যক্তি ৪৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ প্রাইজবন্ড কিনতে পারেন।


বর্তমানে ১০০ টাকা মূল্যমানের ৫৮টি সিরিজের প্রাইজবন্ড রয়েছে। প্রতি সিরিজে প্রাইজবন্ডের সংখ্যা ১০ লক্ষ পিস। সে হিসেবে ৫৮টি সিরিজে মোট প্রাইজবন্ডের সংখ্যা ৫ কোটি 80 লক্ষ পিস। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী দেশে বর্তমানে মোট ৪ কোটি ৪০ লাখ টি প্রাইজবন্ড রয়েছে। সে হিসেবে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ 44০ কোটি টাকা।  বর্তমানে প্রাইজবন্ডের প্রতি ড্রতে প্রতিটি সিরিজের জন্য ৪৬টি পুরস্কার বিদ্যমান রয়েছে, যার মোট অর্থের পরিমাণ ১৬ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা (1ম পুরস্কার 6 লক্ষ টাকা মূল্যমানের 1 টি, 2য় পুরস্কার ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যমানের 1টি, 3য় পুরস্কার 1 লক্ষ টাকা করে 2টি, 4র্থ পুরস্কার 50 হাজার টাকা করে 2টি এবং 5ম পুরস্কার 10 হাজার টাকা করে 40টি)। সে হিসেবে 58টি সিরিজের মোট পুরস্কার 2,668টি, যার মোট অর্থের পরিমাণ 09 কোটি 42 লক্ষ ৫0 হাজার টাকা। বছরে মোট ৪টি ড্রতে  মোট 10 হাজার 6 শত 72টি পুরস্কার প্রদান করা হয় যার মোট অর্থের পরিমাণ 37 কোটি 70 লক্ষ টাকা।


প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের অর্থ করমুক্ত নয়। আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ এর ৫৫ ধারার নির্দেশনা অনুযায়ী ১৯৯৯ সালের ১ জুলাই থেকে এ অর্থের ওপর সরকারকে ২০ শতাংশ হারে কর প্রদান করতে হয়। প্রাইজবন্ডের পুরস্কার জেতার পর মূল প্রাইজবন্ডসহ সরকারের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করলে সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে বিজয়ীকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে অর্থ দেওয়া হয়। দুই বছর পর্যন্ত প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের অর্থ দাবি করতে হয়, অন্যথায় এ অর্থ তামাদি হয়ে সরকারি কোষাগারে ফেরত যায়।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

অফিসকক্ষে ভৌতিক সন্ধ্যা

বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে অফিসের সবাই যখন পাঁচ তারকা হোটেলে আমোদ-ফুর্তিতে মাতোয়ারা, আমি...

একজন রব মিয়ার গল্প ও অন্যান্য

এক চারিদিকে বানের পানি থৈ থৈ করছে। এবার আগাম বন্যা হয়েছে। গ্রামের...

পঠন-পাঠন ও জ্ঞানচর্চা

“There is no frigate like a book.”-Emily Dickinson, অর্থাৎ, “বইয়ের মত এমন...

Our Ill-paid Farmers and Future of Our Foodstuff

A few days back while coming back from Jessore, I came across...